1. admin@rangpurjournal.com : admin :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
হাতীবান্ধায় দায়সারা প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত – রংপুর জার্নাল ভুয়া পোষ্য কোঠায় প্রধান শিক্ষকের চাকুরী অতঃপর শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ হাতীবান্ধায় চেয়ারম্যান পদে স্বামী-স্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা লালমনিরহাট জেলাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন- গোলাম মোস্তফা স্বপন পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন – চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বসুনিয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন – এরশাদুল করিম রাজু লালমনিরহাট সদর উপজেলাবাসীকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন- উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন – ফেরদৌসী বেগম বিউটি ঈদ উপলক্ষে পাটগ্রামে ২৭,৭২০ পরিবারের মধ্যে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটির দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিনোদপুর- জয় মোহন্ত

  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩
  • ৫১০ বার পঠিত

ছোট গল্প – ‘বিনোদপুর’

জয় মহন্ত (শিক্ষার্থী), ইংরেজি বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।

বিশাল মাঠ পেরোলেই চোখে পড়বে সবুজ গাছপালাতে ঘেরা, পাখির কলরবে মুখরিত, পল্লী কবির কল্পনার মতো সুন্দর দুইটি অংশে বিভক্ত বিনোদপুর গ্রাম। দুইটি অংশে বিভক্তের কারন তেমন কিছু না -একটি খরস্রোতা নদী।নদী খানা মায়ের চেয়ে কমে কিসে? নদী থেকে একটু দূরে বিশাল একটি বট গাছ আছে যাহা গ্রামের মুরব্বির মতো।
গ্রামের সব রাখাল,দুরুন্ত বালক-বালিকা থেকে শুরু করে বয়োজেষ্ট সবারই যেন সময় কাটানোর জায়গা ওই বট গাছের ছায়া। তারমানে এই নয় যে সকলের ওই একটাই মাথা গোজার জায়গা, কিছু ব্যাতিক্রমী, ভাবুক,গা শিন-শিনে মানুষতো তো থাকবেই ।ষড়ঋতুর এই রুপালি দেশে ঝড়-বৃষ্টি, কাট ফাটা রোদের দিনে সবাই এখানেই আশ্রয় নেয়। এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে কত প্রেমিক জনা করেছে প্রেম নিবেদন,কত ফেরিওয়ালা বেচাকেনা করেছে,স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা স্কুল কামাই করে সময় কাটিয়েছে,কত পথিক,কত ভিক্ষুক বিশ্রাম করেছে এই অমেয় ছায়াতলে।
বয়োজেষ্ট লোকেদের মুখে শোনা যায়, এই বটবৃক্ষ অনেক কিছুর সাক্ষী হয়ে আছে।স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীরা এখানে ক্যাম্প করেছিলো। এখানেই হয়েছে কতশত হত্যাকান্ড,ধর্ষন,পাষবিক অত্যাচার।এই গ্রামের সবচেয়ে সাহসী মুক্তিবাহিনী যুবকে সবার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এখানেই।তার চিহ্ন এখনো র‍য়েছে। সেইযে গুলি চলেছিলো তখন থেকে আর কোন পাখি এই বৃক্ষে বাসা বাধা তো দূর বসার জো পর্যন্ত করে নি।
এক রমনী ছিলেন যিনি চাক্ষুস সদ্য বিবাহিত স্বামীকে শিরঃচ্ছেদ হতে দেখেছেন। পাক-বাহীনিদের দ্বারা বহুবার ব্যাবহৃত হয়েছেন বিভিন্ন ভাবে। স্বাধীনতার পর লোক লজ্জার ভয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন সদ্যজাত জারজ মেয়ে সন্তানকে। তখন থেকে তিনি এই বট বৃক্ষের পাশেই একটা খড়ের ঘরে জীবন ধারন করে।এখন তিনি বুড়ি নামেই পরিচিত। তার একমাত্র সঙ্গী ‘অভাগী’ নামের একটি মা কুকুর। অভাগী নাম হওয়ার পিছনে একটি কারন আছে। অভাগী যখন বাচ্চা প্রসব করে তার সপ্তাহ দুইয়েক পরে গ্রামের পাগল ছেলে খেলার ছলে তার তিন ছানাকে নদীতে ফেলে দেয়। তখন অভাগী গভীর ঘুমে।অনেক খোজাখুজির পড়েও নিজের সন্তানকে আর খুজে পায়না। পরে তার আর মা হওয়া হয়ে উঠেনি।
এখন গ্রামে স্কুল আছে,সপ্তাহে দুইদিন বট গাছের নিচে হাট বসে,দুই জন হাতুড়ে চিকিৎসক আছে,কেউ একজন বাইরে কোথাও আইন বিষয়ে পড়াশুনা করছে।গ্রামের মেম্বার এখন রাগচটা দুলু মিয়া।জমি-জমা বেচে ইলেকশন করেছে,তাই একটু ভাবসাব নিয়ে চলে আরকি।গ্রামের স্কুলের হেড মাস্টার হরিপ্রসাদ ঠাকুর।পৈতৃক নিবাস কোথায় জানি বলে, এক মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে স্কুলের পাশের বাড়ীতে থাকেন।
একদিন বট গাছের পাশেই ভিক্ষুক বুড়ির চেচাচেচি আর অভাগীর ঘেউ-ঘেউ সোনা গেলো। হরিপ্রসাদ ঠাকুর দৌরে গিয়ে দেখে বুড়ি মেম্বার পুত্রকে শুধু বকা-বকিতে থেমে নেই বরং হাতে থাকা চন্দনের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করছে।আর বেচারী অভাগী ঘেউ-ঘেউ ছাড়া আর কি বা করতে পারে। পাশেই মধু গোয়ালার মেয়ে দারিয়ে কাঁদছিলো। যেহেতু সময়টা ছিলো সন্ধাবেলা, মাষ্টার মসাইয়ের ঘটনার রহস্য বুঝতে বিলম্ব হলো না। কেননা মেম্বার পুত্র এই ঘটনা এর আগেও করেছে। মাস্টার মসাই কোন রকমে বুড়ির হাত থেকে ছারিয়ে রেজাকে নিয়ে নিজের বাড়ীতে গেলেন।ততক্ষনে বুড়িও অভাগীকে সাথে নিয়ে গোয়ালার মেয়েকে বাড়ীতে পৌছে দিলেন।পরে এই বিষয়ে আর কোনো শালিস হয়নি।
ফাল্গুন মাস শেষ।বসন্তের শেষের দিক;চৈত্র মাস।গ্রামে কেন জানি জ্বরের পালি পড়ে গেলো।প্রথমে সবাই মৌসুমি জ্বর ভেবে বিষটা তেমন ভাবে নেয়নি।গ্রামের যে দুই জন হাতূড়ে ডাক্তার ছিলেন তারা পারাপারি করে ঔষধ দিয়েও হিমশিম খাচ্ছেন সামান্য গা-জ্বর টুকূ কমাতে। অনেকে অনেক কিছু বলা বলি করছে। নদীতে পানি নিতে গেলে, বিকেল ও সন্ধার রমনী আড্ডায়, বট গাছের নিচে,বেলাল চাচার দোকানে সব জায়গায় শুধু একই আলাপ।
মেম্বার বাড়িতে হঠাৎ কান্নার রো পড়ে গেলো। রেজা আর নেই।শহর থেকে ডাক্তার এলো, কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।ডাক্তার সাহেব রেজার শরীরে চেক করে বললেন, আমি আরো আগে আসলেও একে বাচাতে পারতাম না।ছেলাটার চেহারা কেমন জানি হয়ে গেছে।চোখের উপরে নিচে কালো দাগ।ধুস্ত-পুস্ত জাদরাল ছেলেটা একদম শুকিয়ে গেছে।সেই দিনের ওই ঘটনার পর তাকে আর দেখাই জায়নি।ডাক্তার সাহেব কি যেন ল্যাব পরীক্ষা করবার জন্য রেজার শরীর থেকে চুল, শ্লেষ্মা, রক্ত সংগ্রহ করলেন।
ডাক্তার সাহেব এখনো গ্রাম পেরিয়ে যাননি, ওমনি খবর এলো দোকানি বেলাল চাচা গুরুতর অসুস্থ।ডাক্তার সহ সবাই ছুটে গেলো তার বাড়িতে। জীবন যায়-যায় অবস্থা,নিজের স্ত্রী,সন্তানদের থেকে কি কারনে যেন ক্ষমা চাচ্ছিলেন।ডাক্তার একটু পানি আনতে বললেন কিন্তু পানি কি তার ভাগ্যে ছিলো?
২/১ দিনেই গ্রামের পরিবেশ কেমন জানি থমথমে হয়ে গেলো।গ্রামে নেমে এলো এক শোকের ছায়া।এই ২/১ দিনে ৫ জনের মৃত্যুর খবর শোনা গেলো।গ্রামের মসজীদ আর মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হলো। কিন্তু কেউ এলো না। সবার মনে একটাই কথা কি জানি অচেনা রোগ এসেছে গ্রামে।মেম্বার বাড়ীতে যারা টিভি দেখেন তারা নাকি শুনেছে এক ভয়ঙ্কর রোগ এসেছে। আল্লাহ্’র গজব, আল্লাহ্’র গজব,আল্লাহ্’র গজব বলতে লাগলেন মসজিদের ঈমাম সাহেব।
সেই দিন রাতে মেম্বার বাড়ীতে গোপন মিটিং ডাকা হলো।গ্রামের ময়-মুরব্বি আর যুবকেরা ছিলো মিটিংয়ে।মেম্বার সাহেবের কথা- ‘আমি জেনেছি যে এই রোগের কারন হতে পারে কোন এক ব্যাক্তি। যার থেকেই ছড়িয়েছে এই মরন ব্যাধি রোগ। আর তাকে যদি গ্রাম থেকে বের করে দিতে পারি তাহলে হয়ত আমরা বাকিদের বাচাতে পারবো।’ মেম্বারের কথা শেষ না হতেই, কালু চৌকিদার খবর নিয়ে এলো গোয়ালার মেয়ে খুবি অসুস্থ আর এইদিকে বেলাল দোকানির স্ত্রী মারা গেলেন। আর ওই বুড়িটা পুরো গ্রামে পায়চারি করছে।পরের দিন মেডিকেল টিম আসবে তাই সেইদিনের মিটিং কোন রকমে শেষ হলো।
পরেরদিন কথা মতো মেডিকেল টিম আসলো। সবার নমুনা সংগ্রহ করে কিছু চিত্র প্রদর্শন পূর্বক গ্রামের সকলকে এই রোগের লক্ষন ও রোগের নাম বললেন।রোগটি-এইডস।সংক্রামক মরনব্যাধি।আবহাওয়া খারাপ থাকার কারনে সেই দিন আর বেশি কিছু বললেন না মেডিকেল টিমের সদস্যরা। আপাতত সবাইকে সতর্ক ও নিজের বাড়িতেই থাকতে বললেন।
সেই দিন রাতে আবার কান্নার রো পরে গেলো।গোয়ালার মেয়ে আর বাজারে যে মেয়েটা মালীর কাজ করতো প্রায় একই সময়ে মারা গেলো।আহারে, বেচারি বাপ-মা মরার পর কত কষ্টই না করেছে! সামন্য কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে অনেক অনৈতিক কাজ করিয়ে নেওয়া হতো তার থেকে।সেদিন রাতে আবার গোপন মিটিং ডাকা হলো। রীতিমতো কালু চৌকিদার সবাইকে মেম্বার বাড়িতে ডাকলেন।মিটিংয়ে সবার মুখে একই কথা, বুড়ির থেকেই ছড়িয়েছে এই মরনব্যাধি রোগ। সিদ্ধান্ত হলো বুড়িসহ খড়ের বাড়ি পুরিয়ে দেওয়া হবে।যেহেতু রাতে বুড়ির কুপি জ্বালিয়ে রাখার অভ্যাস ছিলো তাই কারো সন্দেহ হবে না।শেষ চৈত্রের রাত।সবাই দলবেধে বুড়ির বাড়ির দিকে আসছে।হঠাৎ দমকা হাওয়া কিসের যেন আভাস দিলো।ওইদিকে বুড়ির কুপি নিভে ভূত। স্বভাব মতো তিনি অভাগীকে নিয়ে পায়চারি করতে বেরোলেন।দূর হতে খেয়াল করলেন কিছু লোক তার খড়ের ঘরে কি যেন ঢালছে আবার ২/১ জনের হাতে মশাল।তিনি সবকিছু বোঝার আগেই শা-শা করে বাতাস বইতে শুরু করলো।এমন বেগে বহমান বাতাস! -নিমিষেই যেন সবকিছু উড়িয়ে নিলে গেলো।কালবৈশাখী ঝড়! বুড়ি ও অভাগীর বট গাছের আশ্র‍্যয়ে থেকে সবটা বুঝে ওঠার আগেই-ধুলোয় মিশে গেলো সবকিছু।ঝড়ের প্রকোপ ভোর পর্যন্ত থাকলো।দিনের আলো ওঠার আগেই বুড়ি উপলদ্ধি করলেন, বিনোদপুরের আর কিছুই টিকে নেই।নেই পাখির কলরব,নদীর শান্ততা,কচি-কাচার চেচামেচি,তার চিরচেনা মানুষজনা, বিকেল বেলার বট ছায়ার রমনী আড্ডা।আছে শুধু সেই বট গাছ,বুড়ি,অভাগী, নদী ও এই গ্রামের সাথে মিশে থাকা কিছু স্মৃতি।

দুই মাস পর নমুনার ফলাফল এলো।বুড়ি বাদে সবাই
ছিল -”এইচআইভি” পজিটিভ।মানে এইডস রোগে আক্রান্ত।
সেইদিন, গোধূলি বেলায় বুড়ি একান্ত মনে বিনোদপুর গ্রামের স্মৃতিচারন করতে লাগলেন। বিনোদপুর ছিলো………..

২ responses to “বিনোদপুর- জয় মোহন্ত”

  1. Joy Mohanta says:

    ‘Rangpur Journal’-কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply to polash Kumar Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Rangpur Journal
Theme Customized By Theme Park BD